কুষ্টিয়া সাংবাদিক ফোরাম ঢাকা – Kushtia Journalist Forum Dhaka

blank

আমাদের সংগঠন: প্রাককথন – আদিত্য শাহীন

কুষ্টিয়ার আকাশে তত্ত্ব আর তথ্য ঘুরে বেড়ায়। তন্ত্রসাধণার এই ভিত্তিভূমিতে সব মানুষই কমবেশি ভাবুক প্রকৃতির। জাগতিক সবকিছু তাকে টানে, তার চেয়ে বেশি টানে অদেখা এক এখানে দাঁড়িয়েই লেখালেখির ইচ্ছেটা জাগে। কবিতা লিখতে লিখতে গদ্য। গল্প কিংবা প্রবন্ধের হাত ধরে সংবাদ লেখার ইচ্ছেটা আসে। কারো। কারো শুরুতে কবিতা ও খবর লেখার হাত একসঙ্গে আসে। এই মাটিতে কাঙাল হরিনাথ মজুমদার সাংবাদিকতা করেছেন। এখানকার অনেক সন্তানের কাছে সত্য লিখবার শক্তি ধরা দেয় অলৌকিক এক ফল ফসলের মতো। জেলা শহরের ছোট্ট পরিধির ভেতর সাংবাদিকতার চর্চা করে এসে সহজেই রাজধানীর গণমাধ্যম জগতে নোঙর ফেলার সুবিধাটি যেন এ জেলার শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের জন্য সহজ এক বিষয়। হঠাৎই একদিন আমরা কয়েকজন ভেবে দেখছি, শ দেড়েক থেকে দুশো, বা তিন শো হতে পারে ঢাকায় বসবাসকারী কুষ্টিয়ার সংবাদকর্মীর সংখ্যা। কিন্তু এই মানুষগুলোর কোনো ডাটাবেস নেই। নেই একসঙ্গে নাম ঠিকানা ফোন নাম্বার। এই সংখ্যক মানুষ হতে পারে একটি শক্তি।


কীভাবে গড়া যেতে পারে একটি প্লাটফরম? এই আলোচনা ও জল্পনা কল্পনা চললো বেশ কিছুদিন। শুধু স্বপ্নের শাখা প্রশাখা বিস্তার লাভ করে, মূল কাণ্ড দাঁড় করানো যায় না। আমরা তেজগাঁও শিল্প এলাকার এক বটতলায় বসে শুধু এর আগামী দেখি। চোখের সামনে বেশ কয়েকটি জেলার ঢাকাস্থ সাংবাদিকদের সংগঠন দাঁড়িয়ে গেল। তারা নানা উদ্যোগ নিয়ে সাড়া ফেলে দেয়, আমরা আমাদের ব্যর্থতা নিয়ে ভাবি। সেসময়ের পথচলায় মূলত ফারুক হোসেন, জাহিদুজ্জামান, আব্দুল বারী, জহির মুননা এরা তৎপর ছিলেন নিবিড়ভাবে। সঞ্জয় চাকীকেও মাঝে মাঝে পাওয়া যেত আলোচনায়। চলচ্চিত্র সাংবাদিক আব্দুল্লাহ জেয়াদেরও বেশ আন্তরিকতা দেখলাম।


ঢাকাস্থ কুষ্টিয়ার সাংবাদিকদের একটি তালিকা করা হলো। জনা চল্লিশের হিসেব পাওয়া যায়। সবার মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হয়। উৎসাহের কমতি নেই। সবাই যেন এমন একটি প্লাটফরমের জন্য আগ্রহে আছেন। সবার সম্মতিক্রমে একটি সভা ডাকা হলো। রমনা রেস্টুরেন্টে। ১৪ নভেম্বর ২০১৪। চ্যানেল আই নিউজের জয়েন্ট এডিটর প্রয়াত প্রণব সাহা তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু গণপূর্ত অধিদপ্তরের তৎকালীন তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী টিপু ভাইয়ের মাধ্যমে রমনা রেস্টুরেন্ট বরাদ্দ নিয়ে দিয়েছিলেন। সেদিন যুথবদ্ধ হওয়ার তৃষ্ণায় থাকা অনেকেই অবাক করা এক সন্ধ্যা পেলাম। প্রায় ষাটজন উপস্থিত ছিলেন। অনেক নতুন মুখ জানান দিলেন, আরো অনেক কুষ্টিয়ার সন্তান রয়েছেন যারা ঢাকার সংবাদমাধ্যমে বেশ মর্যাদা নিয়ে কাজ করছেন। ভরপুর স্বতস্ফুর্ততা জানান দিল, সবার দুর্মর আন্তরিকতা একদিনেই জন্ম দিতে পারে একটি সংগঠনের। বহু রকমের প্রত্যয় এলো। সবাই সবার সঙ্গে যুক্ত থাকবে নিজের প্রয়োজনেই। এভাবেই পাখা মেলবে, শাখা ছড়াবে একটি সংগঠন। আর অবশ্যই, সংগঠনটি প্রচলিত সমিতি, তথাকথিত মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ কিংবা তহবিল সন্ধানী কোনো সংগঠন হবে না বরং পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন, চিন্তা ও ভাব বিনিময় এবং পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে যোগাযোগের গুরুত্বকে সবচেয়ে সামনে নিয়ে এগোবে।


ওই সভার গরমে গরমে ‘কুষ্টিয়া সাংবাদিক ফোরাম ঢাকা’র প্যাড, সদস্য ফরম তৈরি হলো। লোগোটি চিন্তা করা হলো সাধক সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের গ্রামবার্তা প্রকাশিকার মুদ্রণযন্ত্রটিকে সামনে রেখেই। সেটিই সই। সবার কাছে দারুণ গ্রাহ্য হলো। সবার তুমুল উৎসাহ। সবচেয়ে বেশি আশান্বিত হলেন প্রিয় সনৎ দা (সনৎ নন্দী)। কুষ্টিয়া থেকে এসে যারা দীর্ঘদিন ঢাকায় সাংবাদিকতা করছেন এমন একটি সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা তাদের মনে গভীরেই ছিল । বিপত্তি ঘটলো জেলাবাসীর স্বভাবসুলভ উদাসিনতায়। পরবর্তী সময়ে সবার সাংঘাতিক রকমের উদাসিনতায় কিঞ্চিত অচলায়তনও তৈরি হলো। সেদিনের সভায় যা যা সিদ্ধান্ত হয়েছিল সেই এজেণ্ডা নিয়ে আমি, জাহিদসহ কয়েকজন নিয়মিত হা হুতাশ করেছি। মাস কয়েক পর একদিন ছোট একটি সভা করা গেল চ্যানেল আই এর ছাদবারান্দায়। সেখানে সনৎ নন্দী, আব্দুল বারী, জাহিদুজ্জামান, রনজক রিজভী ছিলেন। আলো জ্বলে ওঠে, আবার জ্বলেও না। কত যে বৈঠক করেছি। দুইজন, তিনজন, চারজন বসেছি। আলোচনা করেছি, সম্ভাবনা দেখেছি আবার হতাশও হতে হয়েছে। সবাই স্বপ্ন দেখি, স্বপ্নের পথ রচনা করতে করতেই থেমে যাই । মনে হয়, কী হবে এসব করে?


কুষ্টিয়া জেলা সমিতির বর্তমান কমিটি কেবল নির্বাচিত হয়েছে। আমরা একদিন আকস্মিক সিদ্ধান্ত নিলাম কয়েকজন বসবো সমিতির ভবনে। সমিতির নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম বেশ উৎসাহ দেখালেন। তিনি না থাকলেও আগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন ছিলেন। খুব ডাকাডাকি করে ১৫ জনের উপস্থিতি নিশ্চিত আশা করেছিলাম। হাজির হতে পেরেছিলাম ছয় সাত জন। কিন্তু সেবার হতাশ হতে হয়নি। কুষ্টিয়া সমিতির কর্মকর্তাদের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে আবারও মনে হয়েছে একটি সংগঠনের উপযোগিতা আর আমাদের উদ্যোগ সবই ঠিক আছে। পথ চলতেই হবে। অসম্ভবকে সম্ভব করতেই হবে, আমাদের ভেতরেই ভালো সংগঠক আছেন, ভালো কর্মী আছেন, সম্ভাবনাকে জাগিয়ে রাখার মতো আন্তরিক ও তৎপর মানুষ আছেন। শুধু সঠিক হাতে সঠিক ইশতেহার পৌঁছাতে পারলেই হলো। সেদিনও সভা শেষে সামাজিক যোগাযোগে তার বার্তা পেয়ে অনেকেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। অতীতের সব দুর্বলতা কাটিয়ে তৎপর হওয়ার জন্য প্রত্যয়ী হয়েছিলেন।


তারপরও ঝিমিয়ে যায়। পেশাদার মানুষদের পক্ষে সংগঠনের মধ্যে ডুবে থাকা কঠিন। পেশা ও সংগঠনের সম্মিলন ঘটানোটাও সহজ নয়। কুষ্টিয়া সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকা, এটি না কোনো ট্রেড ইউনিয়ন, না প্রেশার গ্রুপ। এটি নিজেরা নিজেরা সংঘবদ্ধ থাকার একটি প্রত্যয়। কুষ্টিয়ার সন্তানেরা রাজধানী ঢাকায় একটি পরিবার হিসেবে থাকলে তার বহুমুখি সুফল আমরা যেমন পাবো, পাবে আমাদের মাতৃভূমি কুষ্টিয়াও। এই সত্য সবাই বুঝি, স্বীকার করি, উপলব্ধি করি কিন্তু নিজেদের বসা হয় না। নানান চাপে আমরা এদিকে তেমন একটা টান অনুভব করিনা।


তবে এবার এই অচলায়তন ভেঙেছে গত বছর থেকে। সনৎ নন্দী, রেজোয়ানুল হক রাজা, মাহমুদ হাফিজ, আইয়ুব আনসারিসহ আরো কয়েকজন সম্মাণিত ব্যক্তি একাট্টা হয়ে বারবার বৈঠক করা, সংগঠনের জন্য সমুচিৎ সিদ্ধান্ত নেয়া কাগজে কলমে একেকটি আয়োজন সম্পন্ন প্রকাশিকা ২০ – করার কারণে কুষ্টিয়া সাংবাদিক ফোরাম কাঙ্খিত গতিপ্রাপ্ত হয়েছে। একঝাঁক স্বপ্নবান তরুণ কয়েক কদম এগিয়ে এবার দাঁড়িয়ে গেছেন সংগঠনের ব্যানার হাতে। বৈঠকে কিংবা আলোচনায় উপস্থিতির ভার যাই থাক, সামজিক যোগাযোগের গ্রুপে আলোচনা চলছে প্রতি মুহূর্তে। পরিবার যাকে বলে, তাই রচিত হয়েছে। সবাই সংঘবদ্ধ হয়ে শক্তি ও উষ্ণতা অনুভব করতো পারছেন। এটি অনেক বড় একটি ক্ষেত্র। এখানে দাঁড়িয়েই সাংবাদিকতা ও সাহিত্য সংস্কৃ তির সুতিকাগার আমাদের মাতৃভূমি কুষ্টিয়ার জন্য গভীরভাবে ভাবার, কিছু করার সুযোগ তৈরি হবে এই স্বপ্ন এখন কমপক্ষে একশ মানুষ দেখছি।

Write a comment