কুষ্টিয়া সাংবাদিক ফোরাম ঢাকা – Kushtia Journalist Forum Dhaka

blank

আরশিনগরের পড়শি – রেজোয়ানুল হক

ইন্টারমিডিয়েট পড়তে ১৯৮০ সালে ঢাকায় এসে কলেজের সহপাঠীদের মধ্যে কুষ্টিয়ার কাউকে পাইনি । পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়েও পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন দেখিনি। ছোটবেলা থেকেই বরং আমাদের এলাকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রধানত, রাজশাহীমুখী প্রবণতা দেখেছি। ধারণা করি আরো আগে থেকে এমনটাই চলছিল। লেখাপড়ার ক্ষেত্রেই যখন এ অবস্থা তখন ব্যবসা-বাণিজ্য এবং চাকরি-বাকরিতেও কুষ্টিয়ার মানুষেরা তখন ঢাকায় কমই এসেছেন তা বলাই বাহুল্য।


বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বরিশাল, কুমিল্লা, চট্টগ্রামের ছেলেমেয়েদের নিজেদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ, এমনকি এলাকাভিত্তিক সংগঠন করতে দেখেছি, তাদের মধ্যে কখনো কখনো মারামারিও হয়েছে, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এলাকার প্রার্থীদের পক্ষে সবাই এক থাকতো। অনেকে একে ‘ইজম’ বলে সমালোচনা করতো। আমি অবশ্য এতে কোনো দোষ দেখিনি। বরং এলাকার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ, একে অপরের সুবিধা- অসুবিধা দেখা— এগুলো তো ইতিবাচক দিক। আর কুষ্টিয়া তখন দৃশ্যপটেই নেই। ব্যক্তিগতভাবে আমি অবশ্য খানিকটা সুবিধা পেয়েছিলাম। সলিমুল্লাহ হলে সিট পাওয়ার আগে কিছুদিন ওই হলের এক রুমে থাকার সুযোগ পেয়েছিলাম। ওই রুমে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা এবং রাজবাড়ীর তিন বড় ভাই থাকতেন, এলাকার সুত্রেই তারা আমাকে গ্রহন করেছিলেন।


ঢাকায় সরকারি-বেসরকারি চাকরির উচ্চপদে বা ব্যবসা-বাণিজ্যে কুষ্টিয়ার কেউ তখন ছিলেন না তা নয়, তবে তা আমাদের জানা ছিল না। আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন বলে আমি শুধু আবুল বারকাত স্যারকেই চিনতাম, ঢাকায় তাকেই অভিভাবক মনে করতাম। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ বা উপস্থিতির ক্ষেত্রে কুষ্টিয়াবাসীর পিছিয়ে থাকার কারণ নিয়ে বন্ধু মহলে কখনো কখনো আলাপ হয়েছে। সম্ভাব্য কয়েকটি কারণের মধ্যে যেটি সবচেয়ে বড় মনে হয়েছে সেটি হলো আমাদের এলাকার মানুষজনের গুটিয়ে থাকার স্বভাব। তখন পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকাও একটা কারণ হতে পারে।


তবে পরিস্থিতি বদলেছে। এখন তো শুধু আমার উপজেলা খোকসারই অনেক ছাত্রছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে বলে শুনেছি। তাদের সংগঠনও আছে। সে হিসেবে ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কুষ্টিয়ার শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কয়েক হাজার হবে। সরকারী-বেসরকারি চাকরি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যেও কুষ্টিয়াবাসীর অবস্থানের বেশ উন্নতি হয়েছে। কুষ্টিয়া সমিতি হয়েছে, সংগঠনের নিজস্ব ভবনও হয়েছে। উপজেলা ভিত্তিক কয়েকটি সংগঠনও আছে, যারা বেশ সক্রিয়। নানা উৎসব বা উপলক্ষে কেন্দ্রীয় এবং আঞ্চলিক এসব সংগঠন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, সেখানে গেলে মনে হয় বাড়িতে গেছি। সাংবাদিকদের সংগঠন ছিল না, সেটিও হয়েছে।


এসব সংগঠন নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা, মাঝে মধ্যে দেখা সাক্ষাতে সহায়তা করছে ঠিক। এর মূল্যও কম নয়। তবে আমার মনে হয় ঐক্যের এই শক্তি পুরোপুরি কাজে লাগানো উচিত। যেমন, লেখাপড়া বা চাকরি করতে প্রথম ঢাকায় এসেছে, অথচ পরিচিত কেউ এখানে থাকলে তার পাশে দাঁড়ানো যায়, যাতে তারা অসহায় বোধ না করে। রবীন্দ্রনাথ, লালন, কাঙাল হরিনাথ, মীর মশাররফ হোসেনের স্মৃতি এবং সৃষ্টি ধন্য কুষ্টিয়াকে দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করা প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের গোড়াপত্তন ও হয়েছিল এই কুষ্টিয়াতেই। অহংকার করার মত এমন অনেক কিছু থাকলেও এ জেলা বরাবরই অবহেলিত।


সর্বশেষ জানতে পারলাম মাঝারি বৃষ্টিতেই নাকি জলাবদ্ধতায় কুষ্টিয়া শহরের অনেক এলাকা তলিয়ে যায়। নদীর পাড়ে অবস্থিত কোনো শহরের এমন দশার খবর শুনে বিস্মিত হয়েছেন এক পরিবেশবিদ। জেলা শহরেরই যখন এ অবস্থা তখন উপজেলাগুলো কেমন আছে তা আন্দাজ করা যায়।


এলাকার নানা সমস্যার সমাধান এবং উন্নয়নে এসব সংগঠন ভূমিকা রাখতে পারে। মনে রাখা দরকার আমরা সংগঠন করছি কুষ্টিয়ার নামে। তাই আমাদের চিন্তা চেতনায় ঢাকার চেয়ে কুষ্টিয়াই বেশি মনোযোগ পাওয়ার দাবি রাখে।

Write a comment