কুষ্টিয়া সাংবাদিক ফোরাম ঢাকা – Kushtia Journalist Forum Dhaka

blank

শত ঐতিহ্যের সোনালী নাম কুমারখালী – মাহমুদ হাফিজ

পদ্ম-গড়াই বিধৌত শত ঐতিহ্যস্নাত কুমারখালী বিশ্ব ইতিহাসের এক স্বর্ণখচিত পৃষ্ঠা । এতে খোদিত হয়ে আছে বাংলা ও বাঙালির শত বছরের সংগ্রাম আন্দোলন, আত্মজাগরণ ও সৃজনশীল মানসমৃত্তিকার সুবর্ণ ইতিহাস। কুমারখালী শত ঐতিহ্যের এক সোনালি নাম। এ মাটির ঐতিহ্য যেমন বিশ্ববিদিত তেমনি বিশ্বখ্যাত মনীষীদের জন্ম ও পদস্পর্শে ধন্য।


নামকরণ:

কমরশাহ নামের একজন লোকের নাম অনুসারে, কুমার নদী বা ওক পাখি (Commercolly Feathers) এর নাম অনুসারে কুমারখালী নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে নানা গবেষকের অভিমত। যুক্তিগ্রাহ্য মত হচ্ছে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে হাড়গিলা বা ওক পাখির পালক ‘কমরকোলি ফেদার্স’ নামে কলকাতার বাজারে বিক্রি হতো। কুমারখালী রেলস্টেশনের ইংরেজি সাংকেতিক নাম CCY. ফলে Commercolly থেকে কুমারখালী নামের উৎপত্তি অত্যধিক যুক্তিসঙ্গত। কুমারখালীর ইতিহাস লেখক ও গবেষক খন্দকার আবদুল হালিমের মতে, চৈতন্য দেবের আমলে কুমারখালীর নাম ছিল তুলসীগ্রাম। নবাব মুর্শিদ কুলী খাঁ এ অঞ্চলের রাজস্ব আদায়ের জন্য কমর কুলী খাঁ নামের এক ব্যক্তিকে কালেক্টরেট নিযুক্ত করেন। তার নাম থেকেই আঞ্চলিক সদরের নাম হয় কুমারখালী। কুমারখালী আনুষ্ঠানিক নাম হলেও স্থানীয়রা একে ‘কুমোরখালী’ বলে উচ্চারণ করে।

ইতিহাস একনজর

কুমারখালী একটি প্রাচীন শহর ও ব্যবসাকেন্দ্র। এখানে নীল ও রেশম কুঠি স্থাপিত হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে। হিন্দু জমিদারদের বাড়ি ও হিন্দুপ্রধান বসতি এলাকা ছিল কুমারখালী। হিন্দু জমিদার ও কোম্পানি আমলে ধনীদের পুরনো দালানকোঠা এখনও বিদ্যমান। বহু ঐতিহ্যবাহী দালানকোঠা গড়াইনদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। নীলকরদের নীলকুঠি হিসেবে খ্যাত দালানে ঐতিহ্যবাহী মথুরানাথ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সে ভবনও এখন নদীগর্ভে। ১৭৯০ সালে কুমারখালীতে একটি খ্রিস্টান কবরস্থান প্রতিষ্ঠিত হয়। রেলস্টেশনের পশ্চিমদিকে তার ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়।

১৮২৮ সালে পাবনা জেলা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হলে কুমারখালী পাবনা জেলাভুক্ত হয়। এর আগে কুমারখালী যশোরের অধীন ছিল। ১৮৫৭ সালে কুমারখালীতে প্রথম মহকুমা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই মহকুমায় বর্তমান রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি, পাংশা থানা এবং কুমারখালী, খোকসা ও ভালুকা (অধুনালুপ্ত) থানা অন্তর্ভূক্ত হয়। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের একশ’ বছর আগে ১৮৭১ সালে কুমারখালী থেকে মহকুমা উঠে যায় এবং থানা হিসাবে কুষ্টিয়া মহকুমার অন্তর্ভুক্ত হয়ে নদীয়া জেলার সঙ্গে সংযুক্ত হয়। কুমারখালীতে প্রথম পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৯ সালে। বাংলাদেশের কোনো মফস্বল শহর এমনকি অনেক জেলাতেও তখন পৌরসভা ছিল না। কুমারখালী পৌরসভার প্রথম আয়তন ছিল আড়াই বর্গমাইল। অবশ্য পুরাতন পৌরসভার বেশিরভাগ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমান পৌরসভার আয়তন ক্রমশ বাড়ছে।

শিক্ষা

অতীতে শিক্ষাক্ষেত্রে অবিভক্ত নদীয়ার যে গৌরবময় ঐতিহ্য, তার সঙ্গে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীরা অক্সফোর্ড কেমব্রিজের তুলনা করতেন। নদীয়ার শিক্ষাক্ষেত্রের সেই গৌরবময় ঐতিহ্য তৈরি হয়েছিল কুমারখালী থেকে।

কুষ্টিয়া জেলার প্রথম হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫৬ সালে, কুমারখালীতে। নীলকুঠির দেওয়ান মথুরানাথ কুণ্ডুর উদ্যোগে কুমারখালী নীলকুঠিতে এম.এন. হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী অনুমোদনপ্রাপ্ত একনম্বর স্কুল। এর দু’বছর আগে ১৮৫৪ সালে কুমারখালীর সাহিত্যিক ও বিদ্যানুরাগী কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের উদ্যোগে স্থানীয় নাট মন্দিরে একটি বাংলা স্কুল চালু হয়। ১৯০৩ সালে কুমারখালী থানার আওতাধীন যদু বয়রায় প্রতিষ্ঠিত হয় যদুবয়রা স্কুল, যা আজ ঐতিহ্যবাহী উচ্চবিদ্যালয়ে পরিণত। ১৮৭৫ সালে তাঁর উদ্যোগে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালাভ করে। এর বিবর্তিত রূপ কুমারখালী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। হুগলীর ফুরফুরা শরীফের পীর সাহেবদের উদ্যোগে কুষ্টিয়া জেলার প্রথম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় কুমারখালীর পান্টি গ্রামে। তাঁদের উদ্যোগে গোপগ্রাম আবুজাফরিয়া আলীয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৪ সালে। কুমারখালী ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ সালে। বর্তমান ক্যাম্পাসে আসার আগে মহাবিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলতো এম. এন. হাইস্কুলের উল্টোদিকে একটি পুরাতন ভবনে। সেই ভবন নদীগর্ভে বিলীন হলে স্টেশনের পাশের নিজস্ব ক্যাম্পাসে মহাবিদ্যালয় স্থানান্তরিত হয়। এই কলেজ প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শহীদ গোলাম কিবরিয়ার ভূমিকা অগ্রগণ্য। পান্টি মহাবিদ্যালয়, কুমারখালী বালিকা মহাবিদ্যালয়, ফুলকুঁড়ি শিশু বিদ্যালয় স্বাধীনতাউত্তোর প্রতিষ্ঠিত হলেও কুমারখালীর শিক্ষাবিস্তারে বেশ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।

এছাড়া মহেন্দ্রপুর, জগন্নাথপুর, মধুপুর, চৌরঙ্গী, কুমারখালী জে এন, দুর্গাপুর, হাসিমপুর, পান্টি, ডাঁশা, সাঁওতা উচ্চবিদ্যালয়গুলো শিক্ষাবিস্তারের প্রাণকেন্দ্র। দানবীর আলাউদ্দীন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত ‘আলাউদ্দীন আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়’, কুমারখালী ইসলামিয়া মাদ্রাসাসহ অসংখ্য বিদ্যালয়, মাদ্রাসা কুমারখালীর শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছে।

ব্যবসা-বাণিজ্য

কোম্পানি আমলে কুমারখালীতে রেশম ও নীলের ব্যবসা শুরু হয়। কুমারখালীর রেশম কুঠিতে ‘পতঙ্গ’ নামের এক প্রকার সূতি থেকে ‘তসর’ কাপড় উৎপন্ন হতো। তখন থেকে প্রতি শুক্র ও শনিবার এখানে কাপড়ের বিরাট পাইকার হাট বসতে থাকে। কালের বিবর্তনে কুমারখালী দেশের বৃহত্তম কাপড় উৎপাদন ও ব্যবসা কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। সমগ্র উপজেলায় লক্ষাধিক তন্তুবায় ঘরে বসে মাটি বা পাতি তাঁতে শাড়ি, লুঙ্গি তৈরি করে। কুমারখালী শহরে কয়েকশ’ ফ্যাক্টরিতে হাজার হাজার হ্যান্ডলুম ( চিত্তরঞ্জন) ও পাওয়ার লুমে লক্ষ শ্রমিক বেডশিট, তোয়ালে, লুঙ্গি উৎপাদনে নিয়োজিত। এর ওপর ভিত্তি করে কুমারখালীতে গড়ে উঠেছে সুতা, রঙ, ও কাপড়ের জমজমাট ব্যবসা। কুমারখালী দেশি কাপড়ের মোকাম বা পাইকারী বাজার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশের কাপড় চাহিদার এক চতুর্থাংশ এখানকার বাজার পূরণ করে থাকে বলে এক হিসাবে বলা হয়ে থাকে।

সাহিত্য-সংস্কৃতি-সাংবাদিকতা

কুমারখালী উপজেলার সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতা অঙ্গনের ঐতিহ্য একে বিশ্বনন্দিত করেছে। লালন-রবীন্দ্র-মশাররফের সাধনপীঠ এ মাটিতে যেমন ঐতিহ্যের শেকড় গাড়া, তেমনি দেশবরেণ্য কবি-সাহিত্যিক-শিক্ষাবিদ-সাংবাদিকের জন্মে এর আলো বাতাস হয়েছে ঐতিহ্যস্নাত ।

কুমারখালীর অকুতোভয় সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথের সম্পাদনায় বাংলার সবচেয়ে প্রাচীন (?) সংবাদপত্র ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ প্রকাশিত হয় ১৮৫৭ সালে। এটি একটানা তিনযুগ প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁরই উদ্যোগে ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এম. এন প্রেস। এটিও বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ছাপাখানা ।

গ্রামবার্তা প্রকাশিকাকে কেন্দ্র করে তখন কুমারখালীতে একটি সাহিত্য-সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে উঠেছিল। যাতে যোগ দিতেন সাধক লালন শাহ, মীর মশাররফ হোসেন, জলধর সেন, অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়, প্রফুল চন্দ্ৰ, দীনেন্দ্র রায়, শিবচন্দ্র বিদ্যার্ণব প্রমুখ। বর্তমান সময় কুমারখালীর সাহিত্য-সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু ১৮৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত (নতুন রূপে ১৯৬১ সালে) কুমারখালী পাবলিক লাইব্রেরী। ‘দরিদ্র বান্ধব পাঠাগার’, ‘উন্নয়ন মজলিস’, ‘চিরন্তনী পাঠাগার’, ‘দুর্গাপুর অগ্রগামী পাঠাগার’ ইত্যাদির বিবর্তিত ও সমন্বিত রূপ আজকের পাবলিক লাইব্রেরী। কুমারখালীর সাহিত্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি লাইব্রেরী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এ অঞ্চলের সাহিত্য সংস্কৃতির পথ ধরে অসংখ্য সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী, রাজনীতিক, সমাজসেবক দেশখ্যাত হয়েছেন। ‘যাদের জন্য ধন্য এ মাটি’ শিরোনামে নিচে স্মরণীয় বরণীয়দের একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দেয়া হলো।

সংগ্রাম-আন্দোলন

নানা সংগ্রাম আন্দোলনে কুমারখালীবাসীর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য হয়ে আছে। জাতীয় ইতিহাসে তার উল্লেখ হোক বা না হোক কুমারখালী এ জাতির সব আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এসেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পূর্বকালের ওহাবী আন্দোলন, স্বদেশী আন্দোলন, নীলচাষ বিরোধী আন্দোলন, কৃ ষক প্রজা আন্দোলন, ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে কুমারখালীর মানুষ নেতৃত্ব দিয়েছে এবং অনন্য ভূমিকা নিয়েছে বলে ইতিহাস সাক্ষী দেয়। বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধে কুমারখালীর বিশেষ ভূমিকা ছিল । ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ওহাবী নেতা কাজী মিয়াজান যুদ্ধের জন্য মুজাহিদ সংগ্রহ করে পাঠাতেন। কাজী মিয়াজানের অন্যতম সহযোগী ছিলেন মুন্সী মুনিরুদ্দীন (মুনির গাজী), জিতু সরদার প্রমুখ। এছাড়া আমবাড়িয়ার আফির উদ্দিন বিশ্বাস, আজিম মোলা প্রমুখ ওহাবী আন্দোলনের মুজাহিদ ছিলেন এবং আম্বালা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বৃটিশ-বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনের নেতা বাঘাযতীন কুমারখালীর আলো বাতাসের সন্তান। যুগান্তর দল ও বিপবী অনুশীলন সমিতিকে কেন্দ্র করে বাঘা যতীন সশস্ত্র অভ্যূত্থানের প্রচেষ্টা চালান। তাঁর সহযোগী অতুল বোসও কুমারখালীর সন্তান। অন্যান্য বিপবীদের মধ্যে ছিলেন ধীরেন রায়, গোঁড়া মৈত্রেয়, অন্নন্দা রায়, নিবারণ রায় প্রমুখ। এছাড়া কুমারখালীর শিল্পপতি মোহনী মোহান চক্রবর্তী স্বদেশী আন্দোলনের একজন নিরলস কর্মী ছিলেন। আর শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের নেতৃত্বে বাংলায় যে কৃষক প্রজা আন্দোলন শুরু হয় তার অন্যতম নেতা ছিলেন কুমারখালীর মৌলভী শামস উদ্দিন আহমদ । তাঁর বড় ভাই মৌলভী আফছার উদ্দিন আহমদ খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের নেতা ছিলেন।

এই রাজনৈতিক ঐতিহ্যের পথ ধরে বিগত স্বাধীনতাযুদ্ধে কুমারখালীর নেতাকর্মীরা বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। সর্বস্তরের জনতা কর্তৃক কুষ্টিয়ার পাক সৈন্যদেরকে আক্রমণ, ঢাকার পরেই স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন এবং পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন কুমারখালীবাসী। ঊনসত্তরের গণআন্দোলন মহান মুক্তিযুদ্ধে সংগঠক হিসাবে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন কুমারখালীর নুরে আলম জিকু, শহীদ গোলাম কিবরিয়া, অ্যাডভোকেট আবদুল বারী প্রমুখ। কুমারখালীর বহু মানুষ সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন এবং শহীদ হন। তাদের সে সংগ্রাম-আন্দোলনের ইতিহাস লম্বা ইতিহাস।

যাঁদের জন্য ধন্য এ মাটি

লালন শাহ বাউল সম্রাট। জন্ম: ভাঁড়রা, ১৭৭৪। পিতা- মাধবচন্দ্র কর, মাতা-পদ্মাবতী । মৃত্য ছেঁউড়িয়া, ৩১ অঅক্টোবর, ১৮৯০।

পূর্ণচন্দ্ৰ লাহিড়ী

উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা। জন্মঃ যদুবয়রা, কুমারখালী । যদুবয়রার লাহিড়ী বিল্ডিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা। কাজী মিয়াজান ওহাবী আন্দোলনের নেতা। জন্মঃ দূর্গাপুর, ঊনবিংশ শতাব্দীর সূচনাপর্ব। মৃত্যু: আম্বাল জেল- ১৮৬৪৷

মীর মশাররফ হোসেন

সাহিত্যিক। জন্ম-১৩ নভেম্বর ১৮৪৭, লাহিনীপাড়া। পিতা- মীর মোয়াজ্জম হোসেন। মৃত্যু- ১৯ ডিসেম্বর ১৯১১।

মোহিনী মোহন চক্রবর্তী

শিল্পপতি, মোহিনী মিলের প্রতিষ্ঠাতা। জন্ম- ২১ আষাঢ়, ১২৪৫, তেবাড়িয়া । পিতা- কৃষ্ণলাল চক্রবর্তী, মাতা- ভগবতী । মৃত্য- ১৯২২।

অধ্যক্ষ হেরম্ব মৈত্র

শিক্ষাবিদ। কলকাতা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ। জন্ম- যদুবয়রা, ১৮৫৮, মৃত্যু-১৯৩৮৷

জলধর সেন

সাহিত্যিক, কাঙাল হরিনাথের শিষ্য। জন্ম-১৩ মার্চ, ১৮৬০, কুমারখালী কণ্ডুপাড়া। পিতা- হলধর মজুমদার । মৃত্যু- ১৫ মার্চ, ১৯৩৯।

গোঁসাই গোপাল

বাউল। জন্ম-১৮৬১, খোরশেদপুর। পিতা গোঁসাই রামলাল । মৃত্যু-১৯২২।

খান বাহাদুর খবিরউদ্দিন আহমদ

শিক্ষা কর্মকর্তা। জন্ম- হোগলা, কুমারখালী ।

গোলাম রহমান পণ্ডিত

শিক্ষা ও গণিতবিদ। যদুবয়রা অঞ্চলের বহু স্কুল পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা। পিতা- আবদুল মান্নাফ। জন্ম আনুমানিক-১৮৭০, মৃত্যু-১৯৫০।

অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়

ঐতিহাসিক । জন্ম-কুমারখালী, ১লা মার্চ, ১৯৬১। পিতা- মথুরানাথ মৈত্রেয়। মৃত্যু- ১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩০।

শিবচন্দ্র বিদ্যার্ণব

সাধক। জন্ম-কুমারখালী-১৯৬২।

বাঘা যতীন

ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনের নেতা। যুগান্তরদলের প্রধান নেতা। জন্ম-২৬ অগ্রহায়ন, ১২৮৬, কয়াগ্রাম । পিতা- উমেশ চন্দ্র। মৃত্যু- বালেশ্বর হাসপাতাল, ভারত, ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯১৫।

কবিরাজ কে.এম. গোলাম ছরওয়ার

চিকিৎসক ও সমাজসেবক। জন্ম-বানিয়াকান্দী, ১৮৬৫। পিতা-হাজী জসীমউদ্দিন। মৃত্যু- ১২ ডিসেম্বর-১৯৭৯।

আফতাব উদ্দিন আহমদ

সমাজহিতৈষী। জন্ম-সুলতানপুর, ১৮৮৬। পিতা- মাহতাবউদ্দিন আহমদ। মৃত্যু-২৯ জানুয়ারি, ১৯৫৯।

মৌলভী শাসস উদ্দিন আহমদ

অবিভক্ত বাংলার মন্ত্রী, কৃষক প্রজা আন্দোলনের নেতা। জন্ম- সুলতানপুর, ১৮৮৭। পিতা- মাহতাবউদ্দিন আহমদ। মৃত্যু-৩১ অক্টোবর ১৯৬৯।

চাঁদ আলী বিশ্বাস

সমাজসেবক। জন্ম-চকরঘুয়া। পিতা-অছিম উদ্দিন বিশ্বাস। মৃত্যু-২০ আগস্ট, ১৯৭২।

গোলাম দরবেশ জোয়াদ্দার

শিক্ষাবিদ। জন্ম-১৮৯০, ধলনগর। মৃত্যু ফেব্রুয়ারি-১৯৭৭।

ভোলানাথ মজুমদার

কবি। জন্ম-কুমারখালী শহর, ১৮৯০। মৃত্যু- ১৯৫৭৷

অতুল কৃষ্ণ বোস

যুগান্তরদলের সদস্য । জন্ম- এতমামপুর, ১৮৯০। পিতা- তারেশ চন্দ্র বোস । মৃত্যু- ১৯৬৬ ৷

খন্দকার আজহারুল ইসলাম

সাহিত্যিক, জোবেদা খানমের পিতা। জন্ম- ১৮৯০, বানিয়াকান্দি । মৃত্যু-১৫ সেপ্টেম্বর-১৯৫৮।

ডা. সদরুদ্দিন আহমদ

চিকিৎসক। জন্ম- ১৫ সেপ্টেম্বর ১৮৯৩, সুলতানপুর। পিতা- মাহতাবউদ্দিন আহমদ। মৃত্যু- ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৬৮।

মাহতাব উদ্দিন ওয়ালী

সাহিত্যসেবক। জন্ম-গড়েরবাড়ি, কাঞ্চনপুর-১৮৯৬।

বসন্তকুমার পাল

সাহিত্য সেবক। প্রথম লালন জীবনী লেখক। জন্ম-২০ কার্তিক ১২৯৭। মৃত্যু-১৯৭৫ ইং।

আকবর হোসেন

জনপ্রিয় উপন্যাসিক। জন্ম, কয়া ১লা অক্টোবর ১৯১৭ । পিতা- আবদুল আলী বিশ্বাস। মৃত্যু- ২ জুন, ১৯৮১।

শহীদ গোলাম কিবরিয়া

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, রাজনীতিবিদ। জন্ম-১৯২০ বাটিকামারা। পিতা-ফকিরউদ্দিন আহম্মদ, মাতা- ফাতেমা বেগম। মৃত্যু-২৫ ডিসেম্বর-১৯৭৪। (ঈদে নামাজরত অবস্থায় আততায়ীর গুলিতে নিহত)।

খলিলুর রহমান

মুক্তিযোদ্ধা, কবি। জন্ম-১৯৪৪ আমবাড়িয়া, মৃত্যু- ১৯৭৩।

জোবেদা খানম

সাহিত্যিক-সংগঠক । জন্ম-৫ মার্চ আগস্ট-১৯২০, বানিয়াকান্দী। পিতা-খন্দকার আজহারুল ইসলাম। মৃত্যু-২৫ জানুয়ারি ১৯৮৯।

নুরে আলম জিকু

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নেতা। জন্ম-২৬ অক্টোবর, ১৯৩৮, পশ্চিমবঙ্গ, স্থায়ী আবাস-দুর্গাপুর, কুমারখালী। মৃত্যু- ফেব্রুয়ারি ১৯১০।

শ. ম. শওকত আলী

শিক্ষাবিদ, জিলা, স্কুলের শিক্ষক, কুষ্টিয়া জেলার ইতিহাস প্রণেতা। জন্ম- ৩১ অক্টোবর ১৯৩৯ । মৃত্যু- ২৬ ডিসেম্বর ২০০১।

শেষকথা

কুমারখালী ইতিহাস ঐতিহ্যের পীঠস্থান হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় পর্যায়ের নানা বিবেচনা থেকে অবহেলার শিকার হয়ে এসেছে। এমনকি ‘ছেঁউড়িয়া’ বা ‘শিলাইদহ’য়ে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠান আয়োজন হলেও প্রচার প্রচারণায় ‘শিলাইদহ, কুষ্টিয়া’, ‘ছেঁউড়িয়া, কুষ্টিয়া’ বলে উল্লেখ করা হয়। দুটি জায়গায় কুমারখালী উপজেলার অধীন। উল্লেখের এই সামান্য পাওনা থেকেও কুমারখালীকে অনেকসময় বঞ্চিত করা হয়। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সরকারের আমলে উন্নয়ন কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতায় বহু থানা ও জেলায় পরিণত হয়েছে, এককালের মহকুমা কুমারখালীকে এখনোও উপজেলার ভাগ্য নিয়েই থাকতে হচ্ছে। এরপরও সংস্কৃতিপ্রাণ কুমারখালীবাসী নিজেদের অতীতের সোনালী ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এবং সত্যিকার সোনার বাংলা গড়তে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

Write a comment